ভারতের কৃষক আন্দোলনের আংশিক বিজয়- ভোটের গ্যাঁড়াকলে পিছু হটলো নরেন্দ্র মোদি
            
            
            
            আন্দোলন প্রতিবেদন
মঙ্গলবার, ৭ ডিসেম্বর ২০২১ | অনলাইন সংস্করণ
দেড় বছর পর ১৯ নভেম্বর, ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি বিতর্কিত তিনটি কৃষি আইন প্রত্যাহার করে নিলো। বিতর্কিত তিনটি কৃষি আইন বাতিল চেয়ে গত একবছর ধরে আন্দোলন চালিয়ে আসছিলো ভারতের কৃষকেরা।
ভারতে কৃষকের বিরুদ্ধে কর্পোরেট পুঁজি ও বৃহৎ পুঁজির স্বার্থে তথাকথিত কৃষি সংস্কারের নামে গত বছর জুন মাসের করোনাকালে মোদি সরকার তিনটি অধ্যাদেশ জারি করেছিল। ঐ বছর সেপ্টেম্বর মাসে সংসদ অধিবেশনে বিনা আলোচনায় বিল তিনটি আইনে রূপান্তরিত করে।
এই ৩টি নতুন আইন হলোঃ ১) কৃষিপণ্য বাণিজ্য আইন; ২) মূল্য সুরক্ষা ও কৃষি পরিষেবা সংক্রান্ত চুক্তি আইন; এবং ৩) অত্যাবশ্যকীয় পণ্য আইন। এগুলোর অর্থ হচ্ছে ১) এই আইনের ফলে সরকারের দেওয়া সহায়ক মূল্যসুবিধা উঠে যাবে। ২। কৃষকের উৎপাদিত পণ্য কেনার দায় সরকার নেবে না। ৩। অত্যাবশ্যকীয় পণ্যের দামের নিয়ন্ত্রণ ক্ষমতা যাবে বড় ব্যবসায়ীদের হাতে।
এই নতুন ৩টি আইনের বিরুদ্ধে দেশ জুড়ে কৃষক আন্দোলন গড়ে ওঠে। মোদি সরকার তার তোয়াক্কা না করে উক্ত আইন বলবৎ রাখায় অনড়, অটল থাকে। ভারতে কৃষক সমাজ এর বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ায়। শুধু তাই নয়, অনির্দিষ্টকালের জন্য সংগ্রামের প্রস্তুতি নিয়ে শুরু করে দিল্লি অবরোধ। এ আন্দোলনে ৪০০ টির বেশি কৃষক সংগঠন ঐক্যবদ্ধ হয়। গড়ে তোলে সংযুক্ত কিষান মোর্চা। মোদি সরকার কৃষকদের সংগ্রাম নস্যাৎ করতে সব ধরেনর ষড়যন্ত্র-চক্রান্ত চালায়। কুৎসা-অপপ্রচার, গুজব রটনা, আন্দোলনস্থলে প্রাচীর তোলা, পানি-বিদ্যুৎ বন্ধ করা, মামলা করা, প্রশাসনিক এবং পুলিশী দমন-নির্যাতন এবং হত্যা করা। এই আন্দোলনে সাড়ে সাতশ’র বেশি কৃষক শহিদের মৃত্যুবরণ করেছেন। কৃষক অবরোধে পাঞ্জাব-হরিয়ানার কৃষকরা শামিল হলে তাদের ‘দেশদ্রোহী’ ‘খালিস্তানি’বলে প্রচার দিয়েছিল মোদির বিজেপি দল।
দমন-নির্যাতনের মুখেও কৃষক আন্দোলন অনড় থাকে। এই তিন আইন প্রত্যাহার না করা পর্যন্ত তারা আন্দোলন চালিয়ে যাবার অঙ্গীকারে দৃঢ় থাকেন। তারই প্রেক্ষিতে এই ঘোষণা।
কেন মোদি নতুন এই আইন প্রত্যাহার করে নিলো? তার পেছনে কোনো শুভ বুদ্ধি কাজ করেনি বা কৃষকদের স্বার্থ সিদ্ধির কোনো সদিচ্ছাও নেই। এটি হচ্ছে ভোটের রাজনীতিতে মোদির গদি রক্ষায় পিছু হটা মাত্র। সম্প্রতি বিভিন্ন রাজ্যের উপনির্বাচনে বিজেপির ফলাফল খারাপ। কংগ্রেসের/বিরোধী দলের কাছে হেরে যাচ্ছে একদম। উত্তর প্রদেশ এবং পাঞ্জাবে শিগগিরই নির্বাচন। সেখানে গো হারার সম্ভাবনা দেখছে বিজেপি নেতারা। এই দুই রাজ্যে জিততে না পারলে মোদির তৃতীয় বারের মতো প্রধানমন্ত্রী হওয়ার স্বপ্ন ধূলিসাৎ হবে। এই দুই প্রদেশে কৃষক আন্দোলন বেশি জোরদার। তাই এই ঘোষণা।
কৃষকরা এই ঘোষণায় বিজয় উল্লাস করলেও তারা মোদিকে বিশ্বাস করেননি। তারা বলেছেন, শুধু মুখের কথায় তারা ভুলছেন না, সংসদে আইন রদ না হওয়া পর্যন্ত তারা অবরোধ ও আন্দোলন চালিয়ে যাবেন। ভারতের এই কৃষক আন্দোলনে অসংখ্য কৃষক বলি হয়েছেন। তাসত্তে¡ও বুর্জোয়া বুদ্ধিজীবীরা অহিংস আন্দোলনের গুণগান গেয়ে মূলত ফ্যাসিস্ট শাসকশ্রেণির নাঙা তলোয়ারের নিচে কৃষক জনতাকে মাথা পেতে দেয়ার নসিহত করছেন।
ভারতের নিপীড়িত কৃষকদের এই ফাঁদে পা দিলে চলবে না। নতুন কৃষি আইন প্রত্যাহার হলেও কৃষকদের সার্বিক মুক্তি হবে না। এটি আংশিক ও ইস্যুভিত্তিক বিজয়। শোষণের যাঁতাকলে নিষ্পেষিত হয়ে ভারতের হাজার হাজার কৃষক আত্মহত্যা করছেন যা বন্ধ হয়নি, হবে না। কৃষকের সার্বিক মুক্তির জন্য নিপীড়িত কৃষকদের গণক্ষমতা প্রতিষ্ঠার বিপ্লবী আন্দোলনে জয়ী না হওয়া পর্যন্ত কৃষকের মুক্তি সংগ্রাম চালিয়ে যেতে হবে। যে সংগ্রাম চালিয়ে যাচ্ছেন ভারতের মাওবাদীরা।
© সর্বস্বত্ব স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত
ভারতের কৃষক আন্দোলনের আংশিক বিজয়- ভোটের গ্যাঁড়াকলে পিছু হটলো নরেন্দ্র মোদি
দেড় বছর পর ১৯ নভেম্বর, ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি বিতর্কিত তিনটি কৃষি আইন প্রত্যাহার করে নিলো। বিতর্কিত তিনটি কৃষি আইন বাতিল চেয়ে গত একবছর ধরে আন্দোলন চালিয়ে আসছিলো ভারতের কৃষকেরা।
ভারতে কৃষকের বিরুদ্ধে কর্পোরেট পুঁজি ও বৃহৎ পুঁজির স্বার্থে তথাকথিত কৃষি সংস্কারের নামে গত বছর জুন মাসের করোনাকালে মোদি সরকার তিনটি অধ্যাদেশ জারি করেছিল। ঐ বছর সেপ্টেম্বর মাসে সংসদ অধিবেশনে বিনা আলোচনায় বিল তিনটি আইনে রূপান্তরিত করে।
এই ৩টি নতুন আইন হলোঃ ১) কৃষিপণ্য বাণিজ্য আইন; ২) মূল্য সুরক্ষা ও কৃষি পরিষেবা সংক্রান্ত চুক্তি আইন; এবং ৩) অত্যাবশ্যকীয় পণ্য আইন। এগুলোর অর্থ হচ্ছে ১) এই আইনের ফলে সরকারের দেওয়া সহায়ক মূল্যসুবিধা উঠে যাবে। ২। কৃষকের উৎপাদিত পণ্য কেনার দায় সরকার নেবে না। ৩। অত্যাবশ্যকীয় পণ্যের দামের নিয়ন্ত্রণ ক্ষমতা যাবে বড় ব্যবসায়ীদের হাতে।
এই নতুন ৩টি আইনের বিরুদ্ধে দেশ জুড়ে কৃষক আন্দোলন গড়ে ওঠে। মোদি সরকার তার তোয়াক্কা না করে উক্ত আইন বলবৎ রাখায় অনড়, অটল থাকে। ভারতে কৃষক সমাজ এর বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ায়। শুধু তাই নয়, অনির্দিষ্টকালের জন্য সংগ্রামের প্রস্তুতি নিয়ে শুরু করে দিল্লি অবরোধ। এ আন্দোলনে ৪০০ টির বেশি কৃষক সংগঠন ঐক্যবদ্ধ হয়। গড়ে তোলে সংযুক্ত কিষান মোর্চা। মোদি সরকার কৃষকদের সংগ্রাম নস্যাৎ করতে সব ধরেনর ষড়যন্ত্র-চক্রান্ত চালায়। কুৎসা-অপপ্রচার, গুজব রটনা, আন্দোলনস্থলে প্রাচীর তোলা, পানি-বিদ্যুৎ বন্ধ করা, মামলা করা, প্রশাসনিক এবং পুলিশী দমন-নির্যাতন এবং হত্যা করা। এই আন্দোলনে সাড়ে সাতশ’র বেশি কৃষক শহিদের মৃত্যুবরণ করেছেন। কৃষক অবরোধে পাঞ্জাব-হরিয়ানার কৃষকরা শামিল হলে তাদের ‘দেশদ্রোহী’ ‘খালিস্তানি’বলে প্রচার দিয়েছিল মোদির বিজেপি দল।
দমন-নির্যাতনের মুখেও কৃষক আন্দোলন অনড় থাকে। এই তিন আইন প্রত্যাহার না করা পর্যন্ত তারা আন্দোলন চালিয়ে যাবার অঙ্গীকারে দৃঢ় থাকেন। তারই প্রেক্ষিতে এই ঘোষণা।
কেন মোদি নতুন এই আইন প্রত্যাহার করে নিলো? তার পেছনে কোনো শুভ বুদ্ধি কাজ করেনি বা কৃষকদের স্বার্থ সিদ্ধির কোনো সদিচ্ছাও নেই। এটি হচ্ছে ভোটের রাজনীতিতে মোদির গদি রক্ষায় পিছু হটা মাত্র। সম্প্রতি বিভিন্ন রাজ্যের উপনির্বাচনে বিজেপির ফলাফল খারাপ। কংগ্রেসের/বিরোধী দলের কাছে হেরে যাচ্ছে একদম। উত্তর প্রদেশ এবং পাঞ্জাবে শিগগিরই নির্বাচন। সেখানে গো হারার সম্ভাবনা দেখছে বিজেপি নেতারা। এই দুই রাজ্যে জিততে না পারলে মোদির তৃতীয় বারের মতো প্রধানমন্ত্রী হওয়ার স্বপ্ন ধূলিসাৎ হবে। এই দুই প্রদেশে কৃষক আন্দোলন বেশি জোরদার। তাই এই ঘোষণা।
কৃষকরা এই ঘোষণায় বিজয় উল্লাস করলেও তারা মোদিকে বিশ্বাস করেননি। তারা বলেছেন, শুধু মুখের কথায় তারা ভুলছেন না, সংসদে আইন রদ না হওয়া পর্যন্ত তারা অবরোধ ও আন্দোলন চালিয়ে যাবেন। ভারতের এই কৃষক আন্দোলনে অসংখ্য কৃষক বলি হয়েছেন। তাসত্তে¡ও বুর্জোয়া বুদ্ধিজীবীরা অহিংস আন্দোলনের গুণগান গেয়ে মূলত ফ্যাসিস্ট শাসকশ্রেণির নাঙা তলোয়ারের নিচে কৃষক জনতাকে মাথা পেতে দেয়ার নসিহত করছেন।
ভারতের নিপীড়িত কৃষকদের এই ফাঁদে পা দিলে চলবে না। নতুন কৃষি আইন প্রত্যাহার হলেও কৃষকদের সার্বিক মুক্তি হবে না। এটি আংশিক ও ইস্যুভিত্তিক বিজয়। শোষণের যাঁতাকলে নিষ্পেষিত হয়ে ভারতের হাজার হাজার কৃষক আত্মহত্যা করছেন যা বন্ধ হয়নি, হবে না। কৃষকের সার্বিক মুক্তির জন্য নিপীড়িত কৃষকদের গণক্ষমতা প্রতিষ্ঠার বিপ্লবী আন্দোলনে জয়ী না হওয়া পর্যন্ত কৃষকের মুক্তি সংগ্রাম চালিয়ে যেতে হবে। যে সংগ্রাম চালিয়ে যাচ্ছেন ভারতের মাওবাদীরা।
আরও খবর
- শনি
 - রোব
 - সোম
 - মঙ্গল
 - বুধ
 - বৃহ
 - শুক্র